কোভিড-১৯
এর ভেজাল ভ্যাকসিন
বলিভিয়ায় বিষক্রিয়া
বলিভিয়ার এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ড: আন্তোনিও
ভীরুইজ জানিয়েছেন যে এই রাসায়নিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসের রক্তকোষ ধ্বংস
করে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় । এই জাতীয় রাসায়নিকে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক উপাদান
নেই যা মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ এর মতো কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারে । বরং
আরও ক্ষতি হয় শরীরের । তাই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন বলে অপপ্রচারের মাধ্যমে যে "বিষাক্ত
রাসায়নিক" বাজারে বিক্রি হচ্ছে তা থেকে মানুষকে বিরত থাকার কথা ঘোষণা করেছে ওদেশের
স্বাস্থ্য মন্ত্রক ।
একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে সংক্রমণ প্রতিহত করতে যখন বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশের ভাইরোলজিস্ট এবং গবেষকরা প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কারের জন্য দিনরাত এক করছেন, তখন আরেক দল কুচক্রী ধান্দাবাজ মানুষ কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন বলে প্রচার করে শুধুমাত্র মুনাফা অর্জন ও মানুষ মারার লক্ষে বাজারে বিষ বিক্রি করছেন । সম্প্রতি এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বলিভিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ।
সারা বিশ্বব্যাপী ক্রমশ ছড়াচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ, আর
তাই নিয়ে যথেষ্টই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন বিশ্বের সবকটি দেশের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক
উপদেষ্টা ও সংস্থাগুলি । বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বলিভিয়ার কোচাবাম্বা
শহরে সম্প্রতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে করোনা সংক্রমণ । এর হাত থেকে মুক্তি পেতে মানুষের
কাছে ভ্যাকসিন ছাড়া কোনো উপায় নেই । তাই অন্যান্য দেশবাসীর মতোই এদেশের মানুষও অপেক্ষায়
রয়েছেন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের । আর এই সুযোগেই কিছু অবৈধ ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা দালালচক্রের
মাধ্যমে একপ্রকার মারণ রাসায়নিক শিশিতে ভরে তার গায়ে কোভিড-১৯ কিওরের লেবেল সেটে ওষুধের
দোকান মারফত ক্রেতাদের বিক্রি করছেন । এই রাসায়নিকের নাম "ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড"
যাতে মাত্রাতিরিক্ত হারে "টক্সিক ব্লিচিং" এর মতো বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান
থাকে এবং যা থেকে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগের ভয়ংকর উপসর্গ দেখা দেয় । ইতিমধ্যেই বলিভিয়ার
"লা-পাজ দ্য ক্যাপিটাল" এলাকার অসংখ্য মানুষ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এই রাসায়নিক
খেয়ে তীব্র বিষক্রিয়ায় হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, বলিভিয়ার কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত বিরোধী
দলের এক সেনেটের মাধ্যমে "কোভিড-১৯ কিওর" হিসেবে "ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড"
প্রস্তুত ও বাজারজাত করার এক বিল পাস করানোর পরই তা সমস্ত দোকানে সরবরাহ করা হয় । কোচাবাম্বার
এক ওষুধ বিক্রেতা জানিয়েছেন যে তার দোকান থেকে প্রায় ১০০০ শিশি এই ওষুধ বিক্রি হয়েছে
। এমনকি তার পরিবারের সুরক্ষার জন্যও তিনি সম্প্রতি এই ওষুধ নিজে খেয়েছেন ও পরিবারের
সকলকে খাইয়েছেন । এখন সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় তিনি নিজেও আতঙ্কিত । তিনি এও বলেন যে
তার দোকান থেকে কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক হিসেবে এই ওষুধ কিনে খাওয়ার পর বিগত এক সপ্তাহে
কমপক্ষে ১০জন বিষক্রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি । সুতরাং এই ওষুধ যে কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক
একেবারেই নয় তা প্রমাণিত । বরং এই ওষুধ বাজারে আসার পরই আরো বেশি মাত্রায় বলিভিয়ায়
মহামারী দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ওষুধ বিক্রেতা ।
সমস্ত দিক
খতিয়ে দেখে ওই রাসায়নিক সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অনুসন্ধান ও বিশ্লেষনের পর US Food
& Drug Administration এর পক্ষ থেকে ওদেশের প্রত্যেক নাগরিকদের প্রতি সতর্কবার্তা
ঘোষণা করে বলা হয়েছে যে কোভিড-১৯ কিওরের নামে যে "ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড" বাজারে
বিক্রি করা হচ্ছে তা একটি সম্পূর্ণ ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক মাত্র ।
"১৫ই আগস্ট
বা চলতি বছরের শেষের দিকেই হোক অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝিই হোক না কেন, কোভিড-১৯ এর
টিকা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার কখনোই এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়, কারণ এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি
প্রক্রিয়া । এই ধরণের কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য দুবছরও সময় লাগতে পারে । তাড়াহুড়ো
করলে ফল খারাপ হতে পারে, যা মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সম্পূর্ণ
" বিজ্ঞান বিরোধী ।" অতি সম্প্রতি WHO এর বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথনের এই
মন্তব্যের পরেও প্রতিদিনই বিশ্বের কোনো না কোনো দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কার প্রায় শেষের
পর্যায়ে বলে প্রচার চালিয়ে মানুষের মনে যেভাবে আশার প্রদীপ জ্বালাচ্ছেন, তাতে অন্যান্য
দেশের অবস্থা শেষমেষ বলিভিয়ার " ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড " এর মতো কোভিড-১৯ কিওরের
নামে আবার বিষক্রিয়ায় মানুষ মারা কল হবে না তো ? প্রশ্ন সমগ্র বিশ্ববাসীর ।
Post a Comment